• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

জলবদ্ধতার কারণে কৃষকদের সাড়ে ৪ হাজার বিঘা জমি আবাদ থেকে বঞ্চিত

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ২২ নভেম্বর ২০২৩

আকরামুজ্জামান আরিফ, কুষ্টিয়া \

কৃষি কার্যালয়ের তথ্যে ও ভৌগলিক মানচিত্রে রয়েছে তিন ফসলি ধানিজমি। কিন্তু বাস্তবচিত্র তার ঠিক উল্টো। সেখানে বছরে মাত্র একবার ধান চাষ করা হয়। হাটু সমান পানি জমে থাকায় বছরের সাত থেকে আট মাস পতিত থাকে প্রায় সাড়ে চার হাজার বিঘা  কৃষিজমি। ওই পতিত জমিতে আবার বাসা বাঁধে কলমি, কচুরি, শাপলা ফুলসহ নানান প্রকার আগাছা। সেখানে নানা উপকরণ দিয়ে কেউ আবার ধরে মাছ। এমনই চিত্র কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের বহলবাড়ীয়া, চাঁদপুর ও বাঁশআড়া বিলে। তিনটা বিল পাশাপাশি অবস্থিত।

কৃষকদের ভাষ্য, পানি প্রবাহের খাল বেদখল করে প্রভাবশালীরা পুকুর খনন করেছে। কেউ আবার বানিয়েছেন ঘরবাড়ি। এতে বছরের সাত থেকে আট মাস জমিগুলোতে পানি জমে থাকে। পানির কারণে মাত্র একবার ধান চাষ করা হয়। এচাষে তাঁদের খুব কষ্ট আর ভোগান্তি হয়। প্রতিবছরই গুণতে হয় লোকসান।

 

আর কৃষি কর্মকর্তারা বলেছেন, জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ছয় হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশষ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যাঁর বাজার মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, কুষ্টিয়া - রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘেঁষে কুমারখালীর নন্দলালপুর ইউনিয়নের বহলবাড়ীয়া, চাঁদপুর ও বাঁশআড়া বিল অবস্থিত। সেখানে প্রায় সাড়ে চার হাজার বিঘা কৃষিজমি রয়েছে। ছয় থেকে সাত বছর আগে বিলের পানি ইউনিয়নের ময়েন মোড় - ভবানীপুর গ্রামীণ সড়কের পাশের খাল দিয়ে বোর্ড অফিস খাল হয়ে এবং ময়েন মোড় - এলংগী রেলসেতু খাল হয়ে গড়াই নদীতে চলে যেতো। তখন কৃষকরা বছরে দুই - তিনবার ফসল ফলাতেন।

কিন্তু ময়েন মোড় - ভবানীপুর সড়কের পাশের খাল বন্ধ করে প্রভাবশালীদের কেউ পুকুর খনন করেছেন। কেউ বানিয়েছেন ঘর বাড়ি। আর সংস্কারের অভাবে ময়েন মোড় - এলংগী রেলসেতু খালটির মুখ থুবরে পড়েছে। সেজন্য বিলের জমিগুলো বছরের সাত থেকে আট মাস হাটুপানির নিচে থাকে। এতে কৃষকদের চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে।

বহলবাড়ীয়া বিলের ষাটোর্ধ কৃষক মসলেম উদ্দিন বলেন, বিলে আমার নিজের ও বর্গা নিয়ে চার - পাঁচ বিঘাজমির চাষ আছে। আগে খাল ছিল, গাংগে ( নদী) পানি চলে যেতো। এখন খাল বন্ধ হয়ে পানি বের হয়না। এতে কোনোমতে একফসল চাষ হয়। একফসল চাষে তেমন লাভ হয়না।

ওই বিলে সাড়ে আট বিঘা জমির মালিক কৃষক সাহেব আলী। তিনি জানান, পানি বের হওয়ার রাস্তা নেই। কেউ চাষ করে, কেউ ফেলে রাখে, কেউ আবার পুকুর কাটছে। যেখানে দুই - তিন ফসল হওয়ার কথা, সেখানে এক ফসলও হয়না। তিনি খাল খননের দাবি জানান।

খাল বেদখলের অভিযোগ অস্বীকার করে প্রভাবশালী তাইজাল শেখের ছেলে সুজন আলী বলেন, প্রায় ৫ বছর আগে আমরা জমি কিনে বাড়ি করেছি। তখন খাল নয়, রাস্তার পাশে পুকুর ছিল। তবে অন্যান্য দখলকারীরা কেউ কথা বলতে রাজি হননি ।

নন্দলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান খোকন বলেন, খাল জুড়ে কেউ বাড়ি করেছে। কেউ পুকুর খনন করেছে। এতে কয়েক হাজার বিঘা জমিতে ফসল হচ্ছেনা। আমি খাল খননের জন্য উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি অফিসকে জানিয়েছি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ রাইসুল ইসলাম জানান, তিনটি বিলে প্রায় সাড়ে চার হাজার বিঘা জমি রয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে সেখানে বর্তমানে মাত্র চার হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশষ্য উৎপাদন হচ্ছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। তবে পানি বের করা গেলে সেখানে আরো ছয় হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশষ্য উৎপাদন করা সম্ভব। যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান বিতান কুমার মন্ডল জানান, ইতিমধ্যে কৃষক, কৃষিবিভাগ ও জন প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ চলছে। যদি তাঁরা সকলে একই ঐক্যমতে পৌছাতে পারেন, সেক্ষেত্রে সরকারের কাছ থেকে একটা বড় বাজেট নিয়ে একটা খাল খনন করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads